বাংলাদেশসহ কয়েক দেশ করোনার টিকার ট্রায়ালের অনুরোধ করেছে: নরেন্দ্র মোদি

0

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, কাতার ও ভুটান নিজ দেশে কোভিড টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছে। নরেন্দ্র মোদি গতকাল শনিবার দেশের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ কথা জানান। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির নিয়ে পর্যালোচনামূলক এ বৈঠক হয়।

গতকালের বৈঠকে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনসহ পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টারাও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, এই মুহূর্তে ভারতে দুটি টিকার দ্বিতীয় ও একটির তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা প্রতিবেশী সব দেশকে কোভিড মোকাবিলায় সাহায্য করছে। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, টিকার জোগান ও বণ্টন প্রতিবেশী ছাড়াও গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বৈঠকে জানানো হয়, করোনার টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতে অগ্রাধিকার পাবেন ৩০ কোটি নাগরিক। এঁদের মধ্যে থাকছেন ডাক্তার-নার্স সহ সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত সবাই। এর বাইরে থাকছেন পঞ্চাশোর্ধ্বরা। পাশাপাশি কো-মর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিরা (বিভিন্ন পার্শ্ব অসুখ), করোনার কারণে যাঁরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সব মিলিয়ে অগ্রাধিকার পেতে চলেছেন কমবেশি ৩০ কোটি ভারতীয়।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, প্রথমেই কারা টিকা পাবেন সেই অগ্রাধিকারের তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। স্থাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন পেশায় ডাক্তার। তাঁরই তত্ত্বাবধানে এই তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী ও অত্যাবশকীয় পণ্য সরবরাহের সঙ্গে দেশে যুক্ত রয়েছেন ৩ কোটির মতো মানুষ। ৫০ বছর ও তার বেশি বয়স্ক ও ডায়াবেটিস, হার্ট, কিডনি বা হাঁপানির মতো বিভিন্ন রোগ থাকা আরো ২৭ কোটি মানুষকেও অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে। এঁরা প্রত্যেকেই করোনার জন্য ঝুঁকিতে।

করোনা মোকাবিলায় তৈরি মন্ত্রিগোষ্ঠীর সাম্প্রতিক বৈঠকে হর্ষবর্ধন জানিয়েছিলেন, আগামী বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে ভারত করোনার প্রতিষেধক পেয়ে যাবে। প্রথম দফায় ৩০ কোটি মানুষের জন্য ৬০ কোটি ডোজ পাওয়া যাবে। ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সেই প্রতিষেধক দেওয়া হবে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেই তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর। সূত্র অনুযায়ী, প্রথম দিকে টিকার সংখ্যা হবে একাধিক। ২০২২ সাল নাগাদ ‘ওয়ান শট’ টিকা চলে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতে টিকা নিয়ে মোট সাতটি গবেষণা চলছে। প্রতিটি গবেষণার তত্ত্বাবধানে রয়েছে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ’ বা আইসিএমআর। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসে (এআইএমএস) ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ভারত বায়োটেকের তৈরি ‘কোভ্যাক্সিন’ টিকার। পুনের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে মানুষের শরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইডেনের সংস্থা অ্যাস্ট্রোজেনেকার তৈরি ‘কোভিশিল্ড’-এর। চলতি বছরের শেষাশেষি কিংবা পরের বছরের শুরুর দিকে এই সব পরীক্ষার ফল চূড়ান্ত জানা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা সম্প্রতি বলেছেন, দেশের সবাইকে টিকা দিতে গেলে সরকারের প্রয়োজন ৬০ হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় রাখা। সেই অর্থের জোগান কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে কি না সে বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পষ্টভাবে এখনো কিছু জানাননি। যেমন জানানো হয়নি, সব নাগরিক করোনার টিকা বিনা মূল্যে পাবেন কি না।

সরকারকে অবশ্য স্বস্তি দিচ্ছে সংক্রমণের নিম্নগতি। দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা এই প্রথম ৮ লাখের কম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমেছে দৈনিক সংক্রমণের হারও। ৬৫ লাখেরও বেশি মানুষ করোনা জয় করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। মোট মারা গেছেন ১ লাখ ১৩ হাজারের মতো। মৃত্যু হার কমে হয়েছে দেড় শতাংশ।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *