হোম কোয়ারেনটাইন শেষে মানসিকভাবে অনেকটাই চাঙ্গা

0

বিষেশ প্রতিনিধিঃ- ছয় মাসের জন্য সাময়িক মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মুক্তির দিন থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজা’য় মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) পর্যন্ত ১৪ দিনের হোম কোয়ারেনটাইন শেষ করেছেন তিনি।
এর আগে গত ২৫ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় মোট ১২ বছর সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া টানা ২৫ মাস ১৭ দিন কারাবাসের মুক্তি পান। ওদিন থেকেই তিনি গুলশানের ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোয়ারেনটাইনে থাকবেন তিনি।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন (মুক্তির দিন) প্রচুর লোক হয়েছিল। কার কী অবস্থা, সেটা তো আমরা জানি না। সেই জন্য ম্যাডামকে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছিল। যদিও আজ কোয়ারেনটাইন পিরিয়ড শেষ হচ্ছে, তারপরও স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে সাবধানেই থাকতে হবে।’

মুক্তির দিন সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফ এফ সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন ও ডা. মামুন খালেদা জিয়াকে দেখে যান।

ওইদিন সন্ধ্যায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান সুযোগ পান খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার।

এর পরের ১৩ দিন দলের কোনো নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। তবে ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা দুবার দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন। সর্বশেষ সোমবার (৬ এপ্রিল) ডা. মামুন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন।

এ ছাড়া ৩ এপ্রিল শুক্রবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এবং ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা পছন্দের খাবার রান্না করে গুলশানের ভাড়া বাসায় আসেন। তারা কিছু সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাটান। সেটা অবশ্য কোয়ারেনটাইন নিময় মেনেই!
ব্যক্তিগত মেডিকেল বোর্ডের সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খুব একটা বেশি উন্নতি হয়নি। দীর্ঘ দিনের কারাবাসের ফলে ভেঙ্গে যাওয়া স্বাস্থ্য রিগেইন করতে পারেননি তিনি। এখনও চলাফেরা করা ও বাথরুমে যাওয়ার জন্য লোকের সাহায্য প্রয়োজন হয় তার। তবে চেনা পরিবেশে থাকা এবং অনলাইনের মাধ্যমে নিকট আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে মানসিক শক্তি ফিরে পেয়েছেন তিন। দেশের বাইরে থাকা ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনিদের সঙ্গে স্কাইপে কথা বলা, ঢাকায় থাকা ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলা এবং দুই/তিন দফা ভাই-বোন এবং তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় মানসিকভাবে অনেকটাই চাঙ্গা অনুভব করছেন খালেদা জিয়া ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় ও নির্ভরযোগ্য হাসপাতালে থাকা সত্ত্বেও তিনি পুরোটা শয্যাসায়ী। সেই অবস্থা থেকে এত দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন সেটা কী করে সম্ভব? তারপরও নিজের পরিবেশে এসে তার মনের জোর কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু এখনও ব্যক্তিগত কাজে অন্যের সহযোগিতা নিতে হয় তাকে।’

এদিকে পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজীবন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খালেদা জিয়া বাসার আঙ্গিনা ও ছাদে সীমিত পরিসরে চাষ করা সবজি ও ফলমূল খেতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। সে কারণে তিনি কারাগারে যাওয়ার পর বাসা রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকা সিএসএফ সদস্যরা বাসার ছোট্ট বাগান পরিচর্যা করেছেন নিয়মিত। এখন ছাদবাগানের সবজিই তার প্রতিদিনের খাবার। এই মুহূর্তে ফলমূল ছাড়া বাইরের কোনো খাবার খালেদা জিয়া খাচ্ছেন না। যেটুকু খাবার তিনি গ্রহণ করছেন, তা দীর্ঘ দিনের পুরোনো শেফ রতনই রান্না করছেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *