বিদায় হজ্বে নূরনবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশী মহান ভাষণ
১০ হিজরি সনের ৯ জিলহজ্ব শুক্রবার বিদায় হজ্জের সময় আরাফা ময়দানে হযরত মুহাম্মদ (স) লক্ষাধিক সাহাবীর সমাবেশে ঐশী মহান ভাষণ প্রদান করেন।
যে ভাষণে আছে অসম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শান্তিময় মানবীয় বিশ্বের ইঙ্গিত।ভাষণে সুস্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে অস্প্রদায়িক বিশ্ব হবে কেমন।আজ মুসলিম সম্প্রদায় শতশত কিতাব ও ফেরকার পিছে না ঘুরে ব্যক্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিদায় হজ্বের ভাষণকে অনুসরণ এবং অনুকরণ করলেই মুসলিম বিশ্বের অবস্থান হতো জঙ্গী মুক্ত।এছাড়াও পেশীশক্তির লোকগুলো ধর্মীয় বিধিবিধানকে তেমন আমলে নিতে চায় না।কারণ সকল ধর্ময়েই কমবেশি শোষণ,বৈষম্য,বর্ণ ও জাতির বিভেদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিধানিক বর্ণনা রয়েছে।উল্লেখ্য বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান খুবই কঠিন।বিদায় হজ্বে নূরনবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশী মহান ভাষণে তা প্রতিধ্বনিত।
বিদায় হজ্বের ঐশী ভাষণ……………………
হে মানুষ!
তোমরা আমার কথা শোনো.এর পর এই স্থানে তোমাদের সাথে আর একত্রিত হতে পারবো কিনা জানা নেই!
হে মানুষ-
আল্লাহ বলেন.হে মানবজাতি তোমাদেরকে আমি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে সমাজ ও গোত্রে ভাগ করে দিয়েছি।যেন তোমরা পরস্পরের পরিচয় জানতে পার।অতএব শুনে রাখো মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই ।আরবের ওপর কোনো অনারবের,অনারবের উপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।তেমনি সাদার উপর কালোর বা কালোর উপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশী সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী,যে আল্লাহকে ভালবাসে।
হে মানুষ-
শুনে রাখো অন্ধকার যুগের সকল বিষয় ও প্রথা আজ থেকে বিলুপ্ত হলো।জাহিলি যুগের রক্তের দাবিও রহিত করা হলো।
হে মানুষ-
শুনে রাখো,অপরাধের দায়িত্ব কেবল অপরাধীর ওপরই বর্তায় । পিতা তার পুত্রের জন্যে আর পুত্র তার পিতার অপরাধের জন্য দায়ী নয়।
হে মানুষ-
তোমাদের রক্ত তোমাদের সম্মান,তোমাদের সম্পদ পরস্পরের জন্য চিরস্থায়ী ভাবে হারাম অর্থাৎ পবিত্র ও নিরাপদ করা হলো যেমন আজকের এই মাস এই শহর সকলের জন্য পবিত্র ও নিরাপদ।
হে মানুষ-
তোমরা ঈর্ষা ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দুরে থাকবে ঈর্ষা ও হিংসা মানুষের সকল সৎগুনকে ধ্বংস করে।
হে মানুষ-
নারীদের সম্পর্কে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি,তাদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করোনা, তাদের উপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে তেমনি তোমাদের উপর তাদেরও অধিকার রয়েছে সুতরাং তাদের কল্যাণের দিকে সবসময় খেয়াল রেখো।
হে মানুষ-
অধীনস্থদের সম্পর্কে সতর্ক হও.তোমরা নিজেরা যা খাবে তাদেরও তা খাওয়াবে.নিজেরা যা পরবে তাদেরও তা পরাবে,শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি পরিশোধ করবে ।
হে মানুষ-
বিশ্বাসী সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অন্যের সম্মান,ধন ও প্রাণ নিরাপদ, সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে অন্যের জন্যেও তাই পছন্দ করে ।
হে মানুষ-
বিশ্বাসীরা পরস্পরের ভাই,সাবধান ! তোমরা একজন আরেকজনকে হত্যা করার মতো কুফরি কাজে লিপ্ত হয়ো না।
হে মানুষ-
শুনে রাখো আজ হতে বংশগত শ্রেষ্ঠত্ব বা কৌলিনপ্রথা বিলুপ্ত করা হলো কুলীন বা শ্রেষ্ঠ সেই যে বিশ্বাসী ও মানুষের উপকার করে।
হে মানুষ-
ঋণ অবশ্যই ফেরত দিতে হবে.বিশ্বস্ততার সাথে প্রত্যেকের আমানত রক্ষা করতে হবে,কারো সম্পত্তি সে যদি স্বেচ্ছায় না দেয়,তবে তা অপর কারো জন্য হালাল নয় । তোমরা কেউ দুর্বলের উপর অবিচার করো না।
হে মানুষ-
জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও মূল্যবান.জ্ঞান অর্জন প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরয-কারন জ্ঞান মানুষকে সঠিক পথ দেখায় । জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে তোমরা চীনে যাও।
হে মানুষ-
তোমরা তোমাদের প্রভুর ইবাদত করবে,নামায কায়েম করবে.যাকাত আদায় করবে,রোজা রাখবে হজ্ব করবে আর সংঘবদ্ধ ভাবে নেতাকে অনুসরণ করবে তাহলে তোমরা জান্নাতে দাখিল হতে পারবে।
হে মানুষ-
শুনে রাখো একজন কুশ্রী-কদাকার ব্যক্তিও যদি তোমাদের নেতা মনোনীত হয়.যতদিন পর্যন্ত সে আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করবে,ততদিন পর্যন্ত তার আনুগত্য করা তোমাদের অবশ্য কর্তব্য।
হে মানুষ-
শুনে রাখো আমার পর আর কোনো নবী নেই । হে মানুষ আমি তোমাদের কাছে দুটি আলোকবর্তিকা রেখে যাচ্ছি.যতদিন তোমরা এ দুটো অনুসরণ করবে ততদিন তোমরা সত্য পথে থাকবে এর একটি হলো-আল্লাহর কিতাব.দ্বিতীয়টি হলো-আমার জীবন-দৃষ্টান্ত।
হে মানুষ-
তোমরা কখনোই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না- কারন অতীতে বহু জাতি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কারনে ধ্বংস হয়ে গেছে।
হে মানুষ-
প্রত্যেককেই শেষ বিচারের দিনে সকল কাজের হিসেব দিতে হবে । অতএব, সাবধান হও।
হে মানুষ-
তোমরা যারা এখানে হাজির আছো,আমার এই বাণীকে সবার কাছে পৌঁছে দিও
{এরপর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন,হে মানুষ আমি কি তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিয়েছি।সকলে সমস্বরে উত্তর দিলো হ্যাঁ।এরপর নবীজী (স:) বললেন হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো! আমি আমার উপর তোমার পক্ষ হতে অর্পিত সকল দায়িত্ব পালন করেছি }
বিশ্বমুসলিম সম্প্রদায় ফেরকাহ কিংবা কিতাবে আর মত্ততা নয়।ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ঐশী ভাষণকে অনুকরণ করুন।আর তা করলেই মুসলিম সম্প্রদায়কে কোন পেশীশক্তি জঙ্গীবাদের অপবাদ দিয়ে নিধন করতে পারবেনা বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ইনশাআল্লাহ
লেখক: মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী
সভাপতি- জয় বাংলা মঞ্চ।