সিনহা হত্যা: পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষী আবার রিমান্ডে

0

সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীর আরও তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এটি তাদের তৃতীয় দফার রিমান্ড। মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার তাদের চার দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এই তিনজন হলেন কক্সবাজারের টেকনাফের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াস। এর আগে এই তিন সাক্ষীকে দ্বিতীয় দফায় চার দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল র‌্যাব। সোমবার দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষ হয়।

৩১ জুলাই রাতে সিনহা টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড় থেকে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ হয়ে হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফিরছিলেন। পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আটক করে। পরে নীলিমা রিসোর্ট থেকে আটক করা হয় তাদের আরেক সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথকে। দুজনই এখন জামিনে মুক্ত আছেন।

ওই ঘটনায় টেকনাফ থানায় করা পুলিশের মামলায় সাক্ষী করা হয় মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন বাসিন্দা নুরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াসকে। পরে তাঁদের তিনজনকে সিনহার বোনের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। প্রথম দফায় এই তিন সাক্ষীকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন র‌্যাবের তদন্তকারীরা। ২৩ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁদের দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন।

মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় র‌্যাবের গাড়িতে করে তিন আসামিকে নেওয়া হয় কক্সবাজার আদালতে। এরপর তাঁদের নেওয়া হয় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে। দুপুর পৌনে একটার দিকে তাঁদের গাড়িতে তুলে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খাইরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আগের রিমান্ডে মারিশবুনিয়া গ্রামের এই তিন আসামি সিনহা হত্যার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আরও তথ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। পরে তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩১ জুলাই সন্ধ্যার দিকে সিনহা সঙ্গী সিফাতকে নিয়ে মারিশবুনিয়ার পাহাড়ে ওঠে ভিডিওচিত্র ধারণ করছিলেন। এ সময় নুরুল আমিন, নাজিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আইয়াস লোকজনকে জড়ো করে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। পরে পাশের মসজিদের মাইক থেকে সিনহা ও সিফাতকে পাহাড় থেকে নেমে তাঁদের সামনে গিয়ে ‘ডাকাত না’ প্রমাণ দিতে বলেন। সিনহা নেমে গিয়ে নিজেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দিয়ে মেরিন ড্রাইভের দিকে চলে যান। এ ঘটনার আগে ও পরে সিনহা সম্পর্কে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে নানা তথ্য দেন এই তিন গ্রামবাসী।

বর্তমানে সিনহা হত্যা মামলার ১৩ আসামির মধ্যে একাধিকবার রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী, থানার এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ। তাঁরা পাঁচজন বর্তমানে জেলা কারাগারে আছেন।

মামলার অন্যতম প্রধান আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ চতুর্থ দফায় একদিনের রিমান্ডে আছেন। মঙ্গলবার তাঁর রিমান্ডের সময় শেষ হবে। সিনহা হত্যা মামলার অপর চার আসামি টেকনাফ থানার এসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে আছেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *