রোববার শুরু মাদারীপুরে আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুণ্ডুবাড়ির মেলা
২৬ কার্তিক ১৪৩০বঙ্গাব্দ,
১১ নভেম্বর ২০২৩ ইং
আব্দুস সাত্তার
মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকার গোপালপুরের কুণ্ডুবাড়িতে ১২ নভেম্বর রোববার থেকে শুরু হবে দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ির মেলা। প্রতি বছর এ মেলার কালিপূজা ও দিপাবলী উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়। মেলা চলবে আগামী ৭ দিন পর্যন্ত।
প্রায় আড়াইশ’ত বছর ধরে দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহি এই মেলাটি ‘কু-ুবাড়ির মেলা’ নামে পরিচিত। প্রতি বছর এই মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঠের আসবাবপত্রের সমারোহই ঘটে বেশি। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পসরা নিয়ে শতশত দোকানি। এ মেলায় সমাগম ঘটে মাদারীপুরসহ বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল জেলার বিভিন্নস্থান থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী।
জানা গেছে, কালকিনি পৌর এলাকার গোপালপুরের কু-ুবাড়িতে ১৭৮৩ সালের নভেম্বরে দিপাবলী ও শ্রীশ্রী কালিপূজা উপলক্ষ্যে দীননাথ কু-ু ও মহেশ কু-ু এই মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুন্ডুদের বংশের নামানুসারে এই মেলা নাম করন করা হয় কুন্ডবাড়ির মেলা। এই সময় দিপাবলীর পরের দিন এই অঞ্চলের বিভিন্ন কালি প্রতিমা জড়ো করা হত। এর মধ্যে যাদের প্রতিমা সর্বাধিক থেকে সেরা হতো তাদের পুরস্কার প্রদান করা হত। সেই সময় চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, কবিগান, জারি গান, পালাগান, নৌকাবাইচের আয়োজন করা হত। কালের বিবর্তনে পালাগান জারি গান, নৌকা বাইচ বন্ধ থাকলেও নাগর দোলার আয়োজন এখনো আছে। বংশপরম্পরায় প্রতি বছর এই মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা বসে। শুধু কুন্ডবাড়ি জুড়ে নয় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গোপালপুর থেকে ভূরঘাটা পর্যন্ত সড়কের দুপাশে বসেছে শত শত দোকান। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসে। কাঠের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের জন্য এই মেলা বিখ্যাত। মেলায়
মাদারীপুর ছাড়াও ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের মাটির, বাঁশের ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন মালামাল ট্রাকযোগে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। প্রতি বছরের তুলনায় এবার কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তবে দু’একদিনের মধ্যে সকল ধরনের মালামাল বিক্রি শুরু হয়ে যাবে।
মেলায় আসা সমীর নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী জানান, আমরা গত ৩৫ বছর ধরে এই মেলায় আসবাবপত্র বিক্রি করার জন্য আসতিছি। এ মেলায় কাঠের আসবাবপত্র বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবপত্র মেলায় নিয়ে এসেছি। অনেক কাঠের দোকান বসেছে মেলায়।
মেলায় ঘুরতে আসা বাঁধন নামের একজন মেলা প্রেমী বলেন, দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ এ মেলা দেখার জন্য দূর থেকে এসেছি। এত বড় মেলা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। সব ধরনের জিনিসপত্র মেলায় রয়েছে। বিভিন্ন জিনিসপত্রের মধ্যে কাঠের নানান ডিজাইনের আসবাবপত্র বেশি উঠেছে। মেলা দেখে খুব ভালো লেগেছে।
পূজা উৎযাপন কমিটির উপদেষ্টা বাসু দেব কুন্ড বলেন, দিপাবলী ও শ্রীশ্রী কালিপূজা উপলক্ষ্যে আমাদের পূর্ব পুরুষরা মাত্র ৪ একর জমির উপর এই মেলার আয়োজন করেন। পরে ধীরে ধীরে এই মেলা বিস্তৃতি হয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পরে। প্রতি বছর এই মোলায় কমপক্ষে ৭-৮ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়। তবে এই মেলাকে কেন্দ্র করে সর্বক্ষণিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকেন।
কালকিনি থানার ওসি মো. নাজমুল হাসান জানান, মেলার নিরাপত্তার জন্য একটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ওখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ নিয়োজিত থাকবে।