রাতেই ছেলেকে বলেছিলেন ‘ক্ষমা করে দিও, অভিযানে যাচ্ছি’
আর মাত্র বছরখানেক। তারপর অবসর। ফিরবেন বাড়ি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জীবনের বাকি সময়গুলো কাটাবেন, চাকরি জীবনের নানা অভিজ্ঞতার গল্প বলবেন এলাকাবাসীসহ পরিবার ও স্বজনদের কাছে।
এমন স্বপ্ন ছিল বান্দরবানের রুমার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জেএসএস সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের।
হাবিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর হলেও পটুয়াখালী পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বহালগাছিয়া এলাকায় বাড়ি করেন কয়েক বছর আগে। নতুন বাসভবনটির নাম দেন ‘সেনা নিকেতন’। অবসরে যাওয়ার পর নতুন ঘরের উঠানে স্বজনদের নিয়ে আনন্দ উল্লাসের নানা স্বপ্ন থাকলেও সেই উঠানে ফিরেছেন, তবে দেশের শান্তির জন্য লড়াই করে লাশ হয়ে।
ওই উঠানে গিয়ে দেখা যায়, চলছে হাবিবুর রহমানের মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি। পরিবারের সঙ্গে থাকার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাই তো বাড়ির দক্ষিণ পূর্ব কোণে তাঁর চিরনিদ্রার জন্য তৈরি করা হয়েছে সাড়ে তিন হাত মাটির ঘর। তাঁর এভাবে চলে যাওয়া নিয়ে বাড়িতে চলছে শোক। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
সেনাবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, বুধবার রাতে বান্দরবানের রুমা জোনের একটি টহল দল এর সঙ্গে সন্তু লারমা সমর্থিত জেএসএস মূল দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিবিনিময় চলছিল। এ সময় সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানসহ জেএসএস এর তিন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়। এ ছাড়া আরেকজন সেনাসদস্য গুলিবিদ্ধ হন।
নিহত হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আব্বার সঙ্গে সব সময় কথা বলতে পারতাম না। যখন ফোন করত তখনই কথা বলতে পারতাম। মোবাইলে নেটওয়ার্ক সমস্যা ছিল। গত রাতে আব্বার সঙ্গে কথা হয়। আব্বা বলছে কোনো ভুল করলে ক্ষমা করে দিও, একটা অভিযানে যাচ্ছি। অবসরের পর আব্বার অনেক স্বপ্ন ছিল এলাকায় থাকবেন। সবার সঙ্গে নানা অভিজ্ঞতা আর গল্প করে সমায় কাটাবেন। কিন্তু আব্বার সে আশা আর পূরণ হয়নি’।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে হাবিবুর রহমানের মরদেহ এলাকায় পৌঁছায়। এরপর ওই এলাকার যুবকের মাঠে জানাজা শেষে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন করা হয়। নিহত হাবিবুর রহমান বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। এর মধ্যে ছোট ছেলেও সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে কর্মরত।