রপ্তানিতে সাত মাস পর ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা
চলতি মাসের প্রথম দিন ঈদের কারণে রপ্তানি হয়নি কোনো পোশাক। পরদিন ১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রপ্তানি। ১৩ আগস্ট সর্বোচ্চ ২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। সাড়ে ৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় ২২ আগস্ট।
জানতে চাইলে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, পোশাক রপ্তানি ধারণার চেয়েও ভালো হচ্ছে। অবশ্য পুরোনো ক্রয়াদেশের পণ্যও যাচ্ছে। তারপরও পোশাকের রপ্তানি আশাব্যঞ্জক। তিনি আরও বলেন, করোনায় বিপর্যস্ত ইউরোপের বাজার স্বাভাবিকের কাছাকাছি চলে গেছে। ফলে ক্রয়াদেশও ভালো আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বেশ পিছিয়ে আছে। তাদের উন্নতি হচ্ছে শ্লথ গতিতে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে গত মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। এদিকে দেশেও ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর মাসখানেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে। তাতে এপ্রিলে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরের মাসে রপ্তানি হয় ১২৩ কোটি ডলারের পোশাক। জুনে সেটি বেড়ে ২২৫ কোটি ডলার হয়। সব মিলিয়ে গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৬১৮ কোটি ডলার কম।
মার্চে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রপ্তানিমুখী শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। সেই তহবিল থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কারখানার মালিকেরা ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জে ঋণ নিয়ে শ্রমিকদের তিন মাসের মজুরি দিয়েছেন। জুলাইয়ের মজুরি দিতেও সহায়তা পান মালিকেরা। এপ্রিলে কারখানা বন্ধকালীন ৬৫ শতাংশ মজুরি দিয়েছেন।
অন্যদিকে দুই মাসের ব্যবধানে পোশাক রপ্তানিতে গতি ফিরলেও ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করেছেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, করোনায় ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ প্রাথমিকভাবে বাতিল ও স্থগিত হয়েছিল। তার মধ্যে প্রাইমার্ক ৩৩ কোটি, ইন্ডিটেক্স ৮ কোটি ৭০ লাখ, বেস্টসেলার ৮ কোটি ৩০ লাখ, মাদারকেয়ার ৫ কোটি ৬০ লাখ, কোহলস ৫ কোটি ৪০ লাখ, গ্যাপ ৩ কোটি ৮০ লাখ, জেসি পেনি সাড়ে ৩ কোটি, ওয়ালমার্ট ১ কোটি ৯০ লাখ, ডেবেনহাম ১ কোটি ৮০ লাখ এবং রালফ লরেন ১ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করে (হিসাবটি আনুমানিক)।
পরবর্তীকালে নানামুখী চাপের কারণে অধিকাংশ ক্রেতাই পণ্য নিতে সম্মত হয়। তবে অর্থ পরিশোধে ছয় মাস পর্যন্ত সময় চায় অনেকে। সর্বশেষ গত ২ জুলাই লেভি স্ট্রজ এবং তার কয়েক দিন পর গ্যাপ ইনকরপোরেশন বাতিল করা ক্রয়াদেশের পোশাক পূর্ণ দাম দিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ব্র্যান্ড দুটির ৩০-৪০টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে পোশাক রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় ছিল। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ৩২৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কম।
জানতে চাইলে ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সাধারণত আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আমাদের ক্রয়াদেশ কম থাকে। তার ওপর করোনা। ফলে বর্তমানে কারখানাগুলো ৬০-৭০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। তবে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ না এলে নভেম্বর থেকে ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পাবে। সেই হিসাবে আগামী দুই মাস আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং।’
মোস্তাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘ক্রয়াদেশ আসবেই। সে কারণে ক্রয়াদেশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা উদ্যোক্তারা যদি পণ্যের মূল্য নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হই, তাহলে রপ্তানি শিগগিরই ব্যাপক হারে বাড়বে।’