মসজিদে বিস্ফোরণের জন্য দায়ী অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন
অবৈধ গ্যাস সংযোগের রাইজার থেকে ও পাইপ লাইনের ওপর মসজিদ নির্মাণ করায় লাইনের ছিদ্র থেকে নির্গত গ্যাস মসজিদে জমা হয়। অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিদ্যুতের অবৈধ লাইন ব্যবহার করতে গিয়ে স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটে মসজিদে আগুন ধরেছে বলে।
আজ বৃহস্পতিবার এ কথা জানান সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিতাস গ্যাসের অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহাব।
৪ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক মানুষ দগ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩৭ জনকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এখন পর্যন্ত শিশুসহ ৩১ জনের মৃত্যু হয়। ওই বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে গেছে ও থাই জানালার গ্লাস উড়ে গেছে।
মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় গত শনিবার মসজিদ পরিচালনা কমিটি, তিতাস গ্যাস ও ডিপিডিসির অবহেলাকে দায়ী করে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করেন ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির। দণ্ড বিধির ৩০৪ (ক) ধারার এ মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি জরিমানা বা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
বিস্ফোরণের ঘটনায় মসজিদ কমিটি অভিযোগ করেন, গ্যাস লিকেজের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে লিকেজ মেরামত করতে তিতাস গ্যাস থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়া হয়। তাঁরা ঘুষের টাকা জোগাড় করতে পারেননি বলে গ্যাস লিকেজ মেরামত করা যায়নি। মসজিদ কমিটির এই বক্তব্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও সিটি করপোরেশন পৃথক পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির গণশুনানিতে ৪৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ডিপিডিসি মসজিদের সামনে থেকে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও একটি খুঁটি সরিয়ে নিয়েছে।
বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিতাস গ্যাস মসজিদের পূর্ব ও উত্তর পাশের সড়কের পুরো মাটি খুঁড়ে পরিত্যক্ত পাইপলাইনে ছয়টি ছিদ্র দেখতে পান। এ ঘটনায় তিতাসের চার কর্মকর্তাসহ আটজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত বুধবার তদন্ত কমিটির প্রধান তিতাস গ্যাস ঢাকা কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) আবদুল ওয়াহাব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা মাটি খুঁড়ে তিতাসের পাইপলাইনে ছয়টি ছিদ্র পেয়েছেন। ওই ছিদ্র দিয়ে গ্যাস যেখানে জায়গা পেয়েছে সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মসজিদের কলাম বেইজ নির্মাণের সময় তিতাসের পাইপলাইনের র্যাপিং নষ্ট হয়ে মাটির সংস্পর্শে এসে পাইপ লিকেজ হয়েছে।
তবে পাইপ লিকেজের জন্য মসজিদকে দায়ী করে তদন্ত কমিটির এই বক্তব্য নাকচ করে দেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর।