বিস্বাদের আকাশ ঝরায় শান্তির বারি : নীলিমা সরকার
পৃথিবীটা তার কাছে ততোটাই বড় যার সম্পর্কের পরিধি যতটা বিস্তৃত! এই জীবন স্বার্থক কিংবা নয়ার্থক হয়ে ওঠে অধিকার আর কর্তব্যের মধ্য দিয়ে। কিছু প্রান তবু বেঁচে রয় যদিয়ো তার দেয়া এবং নেয়ার পাঠ চুকে থাকে, তবে সেই অস্তিত্বগুলোর জীবন দুর্বিসহ!
যেখানে বেশিরভাগ উদাহরণ পিতা মাতা। অসহায় নবজাতকের নিরাপদ নির্ভরতা জন্মদাতা বাবা মা। মায়ের ভূমিকা শিশুর জীবনে অপরিসীম বলেই বিধাতা মায়েদের ধৈর্য্য অপরিসীম করে দেন! মায়েরা এতটা ধৈর্য্য আর কোথাও রাখতে পারেনা যতটা তার সন্তানের ক্ষেত্রে প্রতিয়মান হয়।
ক্রমশ উঁচু হয়ে ওঠা মাথা গুলো বাবা মায়ের উচ্চতা মাড়িয়ে উপলব্ধি করে জ্ঞান বিজ্ঞান যোগ্যতায় ও তারা ছাড়িয়ে গেছে পিতামাতাকে।
পিতা মাতার পরামর্শ, সিদ্ধান্ত, শিক্ষা তখন অর্থহীন মনে হয়। কখনো কখনো পিতার মাতার উপস্থিতিই বিষাক্ত মনে হয়।
প্রকৃত পক্ষে কোনো পিতামাতার চেয়েই তার সন্তান জ্ঞানী হতে পারেনা, সে হোক না কোনো দিনমজুরের মহাকাশ বিজ্ঞানী সন্তান!
আর তাই আবারো ফিরে আসতে হয় সেই অনুভূতিতে যেখানে সন্তানের পছন্দের খাবার গুলো বাবা মায়ের কাছে সবসময় অপছন্দের!
যেখানে অসুস্থ সন্তানের প্রতিটি রাতই মায়ের চোখে ঘুম থাকেনা, যেখানে সন্তানের মলিন মুখে খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়ে মা বাবার বুক।
কতটা স্নেহ ভালোবাসা স্বপ্ন থাকলে নয়মাস দশদিনের বয়ে বেড়ানো অস্তিত্ব গলা দিয়ে চারবার খাবার গিলতে দুইবার বমি করে,
হরমোন তারতম্যে গর্ভবতী মা গরমের তিব্র তান্ডবে ঘরের মেঝেকে জলাশয় বানিয়ে তাতে ডুবে থাকে,
পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টকর যন্ত্রণাদায়ক মুহুর্ত কাটিয়েও নবজাতকের মুখে চেয়ে হাসতে পারে সুখের হাসি, শীত কিংবা গরমের প্রতিটি রাতের প্রতিটি মুহূর্ত কেবল মা’ই পারে একদিক একভাবে শুয়ে থেকে একটা হাত নবজাতক/ শিশু সন্তানের নিচে রাখতে যেনো তার সন্তানের প্রস্রাবে ঠান্ডা লেগে না যায়, যেনো সন্তান বোঝার আগেই তার প্রস্রাব মায়ের হাতকে সতর্ক করে দেয়।
ব্যাতিক্রম জীবনে পর্যবসিত মায়েরা রান্না খাওয়া, বাটনা বাটা, মাছ কাটা কাপড় ধোয়ার সবগুলো করতে পারে সন্তানকে কোলে রেখে, এই অভিজ্ঞতা কেবল সেই মায়েদের যে মায়েদের জীবনের “মা” নামক অস্তিত্ব বিলিন হয়ে গেছে, নিয়তি যে মায়েদের অন্যান্ন সম্পর্ক সংক্ষিপ্ত করে গলা ধাক্কায় পার করছে জীবনের দির্ঘ প্রতিবন্ধক পথ।
মায়ের প্রয়োজনীয়তা তখনও তোমরা অনুভব করবে যখন তোমরাও মা হবে।
আমি এখনো অনুভব করি মর্মে মর্মে আমার মায়ের শুন্যতা!
মা আর বাবা নামক মানুষ দুটির দোষ গুনের মাঝে মাতৃত্ব আর পিতৃত্ব আজো নাড়া দেয় আমার বুকে লালিত সন্তান সত্বাকে।
আজো বেদনা কাতর সময়গুলিতে মা’য়ের শুন্যতা আমার বুকের পাঁজর ভেঙ্গে নেত্রনালীর প্রচন্ড যন্ত্রণা হয়ে চোখ ভিজে যায়, তোমরা তা দেখোনা, কারন আমি দেখতে দেইনা, কারন আমার এই অনুভূতি তোমাদের কারো কাছে উপহাসের বিষয় হোক তা আমি চাইনা।
তিল তিল করে গড়ে তোলার মাঝে কত সুখ সাচ্ছন্দ্য স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয় তা কেবল মা’ই জানেন।
বিস্বাদের সবটুকু সময় বরণ করে নেয় বাবা মা সন্তানের মঙ্গল ভেবে।
সবটুকু জীবন উৎসর্গ করে একসময় মায়ের অনুভূতিগুলো অবজ্ঞা অবহেলায় বিতারিত হয়।
কিছু মাতৃত্ব তবুও অবোধ হয়ে সয়ে যায় কিংবা প্রচন্ড প্রতিবাদে অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যার্থ প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যায়! আবার কিছু মাতৃত্ব নির্জনতা খোঁজে সারাজীবনে সঞ্চিত অনুভূতিগুলো জিইয়ে রাখতে।
পিতা মাতার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার প্রায়শ্চিত্য অভিজ্ঞতা হার মানে তখন,যখন সংসার নিয়মের কিংবা নিয়তি বিধানের শক্ত শৃঙখলে জরিয়ে যায় পা, তারা তখন ইচ্ছে করলেই জীবন কে নতুন করে শুরু করতে পারেনা। তাদেরো সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য মমতার কাছে ততক্ষন জিম্মি হয়ে যায় তাদের চাওয়া পাওয়া আনন্দ বেদনা।
কেবল দির্ঘশ্বাস ব্যাতিরেকে কিছুই করার থাকেনা।
তারাও বোঝে একদিন অবজ্ঞা অবহেলায় পিতা মাতার লাঞ্চিত জীবন একসময় খোঁজে অচেনা অজানা নিরব কোনো ভিন্ন জগত!
সীমিত সম্পর্কের সবটুকু বিতারিত করলে জীবন শুন্যতাকেই আপন করতে চায়!
শুন্যতাকে সবসময় নিজের মত করে সাজানো যায় বলেই কখনো কখনো শুন্যতার চেয়ে আপন কিছুই থাকেনা।
সর্বোপরি- ঘাতে আঘাতের কোনো তিক্ততাই পারেনা সন্তানের প্রতি পিতা মাতার আশির্বাদ ঠেকাতে।
আঘাতে জর্জরিত বুক চিরে বেরিয়ে আসা দির্ঘশাস গুলো বাবা মা’রা নিজের বুকেই ছাড়বে, সে নিশ্বাস প্রশ্বাস কখনোই মাটির বুকে কিংবা আকাশের পানে ছাড়বেনা এটা নিশ্চিৎ থেকো সন্তানেরা, কারন কোনো বাবা মা’ই চায়না দির্ঘশ্বাস গুলো অভিশাপ হয়ে সন্তানের অস্তিত্ব স্পর্শ করুক।