‘বিদায় বেলায়’ কান্নায় ভেঙে পড়লেন তামিম
২২ আষাঢ় ১৪৩০ বঙ্গাব্দ,
০৬ জুলাই ২০২৩ইং,
জেলা প্রতিনিধিঃ
আচমকাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিলেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। তবে অবসরের সংবাদ সম্মেলনে এসে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। বারংবারই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল পানি। নিজেকে সামলে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করতে গেছে তাকে। তবে কয়েক দফায় নিজেকে সামলে নিয়ে শেষমেশ অবসরের ঘোষণাটা দেন।
নানামুখী আলোচনার পর ২০২২ সালের ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। ঠিক এক বছরের মাথায় ওয়ানডে ফরম্যাটসহ পুরো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই অবসরের ঘোষণা দিলেন তিনি।
০৬ জুলাই বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের স্থানীয় এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ঘোষণা দিয়েছেন দেশসেরা ওপেনার।
অধিনায়ক তামিম ইকবালের ফিটনেস ইস্যুতে গত কিছুদিন ধরেই বেশ আলোচনা ছিল। এত আলোচনা ভালোভাবে নেননি তিনি। তাই বৃহস্পতিবার হুট করে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। সেখানেই নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে তামিম বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটি ছিল আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেকদিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।
সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তামিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কান্নায় গলা ধরে এসেছিল।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে পঞ্চপা-বের অন্যতম এই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘আমি সব সময় বলেছি ক্রিকেট খেলেই বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে অনেক পরিস্থিতির মুখে পড়েছি, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার ছোট চাচার হাত ধরেই ক্রিকেটে এসেছি। যারা আমাকে এই পর্যায়ে আনতে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে হারের পরই বড় কোনো সিদ্ধান্তের গুঞ্জন ভাসছিল। শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই সত্যি হলো। তামিম অধিনায়কত্বসহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। তাও আবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক তিন মাস আগে! এই ঘোষণার আগে বিসিবি কিংবা ক্রিকেট বোর্ডের কোন পরিচালকের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেননি তিনি। একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে তামিম এই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
গত পরশু সিরিজ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আনফিট হলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবেন বলে ঘোষণা দেন ওয়ানডে অধিনায়ক। শতভাগ ফিট না হয়েও তামিমের ম্যাচ খেলার ঘোষণায় বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন৷
মাথার ওপর বিশাল চাপ নিয়ে বুধবার আফগানদের মুখোমুখি হয়ে ব্যর্থ হন তিনি। বুধবার প্রথম ওয়ানডেতে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি ৷ দলও হেরেছে আফগানিস্তানের কাছে ৷ পরে ফিল্ডিংয়ে খুব ভালো অবস্থানে পাওয়া যায়নি তামিমকে। স্পষ্ট বোঝা যায় ফিটনেস ঘাটতি।
সব কিছু মিলিয়ে বাস্তবতা তামিমের বিপক্ষেই। ফিটনেসহীন তামিমের আত্মবিশ্বাসও ছিল তলানীতে। বিশ্বকাপের মাত্র তিন মাস আগে অধিনায়কের এমন অবস্থা চাইবে না কোন দল। তামিম হয়তো বিষয়টি উপলব্ধি করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত বছর ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী তামিম। এবার ওয়ানডে ও টেস্ট থেকেও অবসরের ঘোষণা দিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের কেনিয়ার বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম ওয়ানডেতে এই সংস্করণেই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে তিনি ৮ হাজার ৩১৩ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ১৪টি, হাফ সেঞ্চুরি ৫৬টি।
এছাড়া ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে তার সংগ্রহ ৫ হাজার ১৩৪ রান। ৩১ হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন ১০টি সেঞ্চুরি। সবার আগে ছেড়ে দেওয়া টি-টোয়েন্টিতে ৭৮ ম্যাচে করেছেন ১ হাজার ৭৫৮ রান। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৭টি হাফ সেঞ্চুরিও।