ঢাকা-১৪ আসনে আলোচনার শীর্ষে নতুন চমক !

0
ফাইল ফোটো

ফাইল ফোটো

বিশেষ প্রতিবেদক:

প্রয়াত সাংসদ আসলামুল হকের শূন্য হওয়া ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী জুলাই মাসে। ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার গাবতলি ও মিরপুরের অধিকাংশ নিয়ে গঠিত আসনটির নির্বাচন নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে স্থানীয় মাঠের রাজনীতি। এদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আসনটিতে সাংসদ হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী।

বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে নিশ্চিত সংঘর্ষ এড়াতে হাইকমান্ড একজন ক্লিন ইমেজের প্রার্থীর কথা ভাবছেন। নেতাকর্মীরা মনেকরেন বর্তমান রাজনীতির মাঠে একমাত্র পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক যুবলীগ চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলচোনা করে জানা যায় যে, শেখ পরশ যুবলীগের চেয়ারম্যান, ঢাকা-১৪ আসনে তিনি মনোনয়ন পেলে দলীয় কোন কোন্দল থাকবে না।

শেখ পরশ একজন নির্লোভ মানুষ। রাজনীতিতে নামার সব ধরনের সুযোগ সামনে থাকার পরও এত বছর রাজনীতির ডামাডোল থেকে দূরে ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়ে বিত্ত-বৈভব, প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ানোর উৎকট প্রতিযোগিতা যখন অবাধে চলছে, তখন রাজনীতির প্রতি শেখ পরশের নির্লিপ্ততা নিঃসন্দেহে তার নির্লোভ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহেই শেখ পরশ রাজনীতিতে জড়িয়েছেন। স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিবেন, সে অনুযায়ী কাজ করবো। এর আগে প্রার্থীতা নিয়ে কোন কথা বলতে পারি না।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, রাজনীতির সুতিকাগার ঢাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন ঢাকা-১৪। ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার গাবতলি ও মিরপুরের অধিকাংশ এলাকা এই আসনটির অন্তর্ভুক্ত। যার কারণে আসনটির দলীয় প্রতিনিধি নির্ধারণে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব দেয়া হবে। বিশেষ করে প্রার্থীর মাঠের রাজনীতির পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা বিবেচনায় আনা হবে।

আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নির্বাচন কমিশন আসনটিতে উপনির্বাচনের ঘোষণা দিলে মনোনয়ন ফরম ছাড়া হবে। তারপর দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত করা হবে প্রার্থী। বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যেকোনো নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেতে অধিকসংখ্যক প্রার্থী চেষ্টা করবেন- এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। যারা প্রচারণা করছেন তারা সবাই জানেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে।

এদিকে যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতা শুরুতে ঘোষণা দেন ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে লড়বেন। টানা কয়েকদিন তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা জানান। দলের হাইকমান্ড থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়ায় সরে দাঁড়ান তিনি। কয়দিন পর মহানগর আওয়ামী লীগের আরেক নেতা একইভাবে চা-চক্র ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার দাবি দলীয় হাইকমান্ড থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন। নির্বাচনের পর তিনি কি কি উন্নয়ন করবেন, কেমন সহযোগিতা লাগবে সেসব বলেন। ওই আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এক এমপিও একইভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশী ওই তিন নেতার চা-চক্রে উপস্থিত এক ব্যবসায়ী বলেন, সবাই বলছেন আওয়ামী লীগের সবুজ সংকেত পেয়েছেন। আমাদের সহযোগিতা চান। কিন্তু দলের মনোনয়ন তো পাবে একজন। বিষয়টি আমার জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, মনোনয়ন ঘিরে এরইমধ্যে নির্বাচনী আসনে নানা রকম ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে লবিং, গ্রুপিং এখন তুঙ্গে। কাকে রেখে কাকে সমর্থন দেবো, কার জন্য কাজ করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আমরা যারা ব্যবসায়ী ‘যেই এমপি হয়ে আসুন না কেন আমাদের তারই সহযোগিতা লাগবে’। তবে শেখ পরশের মত নির্লোভ সৎ সুশিক্ষিত নেতা মনোনয়ন পেলে ঢাকা-১৪ আসনের ব্যবসায়ীদের জন্য এটি খুবই শান্তির বার্তা বলে মনে করেন তিনি।

এরইমধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন আওয়ামী লীগের ব্যানারে নির্বাচনের জন্য এলাকাবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। বিএনপি আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। তাই দলীয় প্রতীক পেলেই ‘নিশ্চিত জয়’- এমনটি ভেবে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাদের মধ্যে মনোনয়ন যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

স্থানীয় নেতারা পড়েছেন বিভ্রান্তির মধ্যে। এ কারণে নির্বাচনকেন্দ্রিক গড়ে উঠছে গ্রুপিং। বিষয়টি দলের জন্য বিব্রতকর বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

গত ৪ঠা এপ্রিল ঢাকা-১৪ আসনের টানা তিনবারের আসলামুল হক মারা যান। ইতিমধ্যে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ​

এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- সদ্য প্রয়াত এমপি আসলামুল হকের সহধর্মিণী মাকসুদা হক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এসএ মান্নান কচি, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন,কেন্দ্রীয় যুবলীগ সাধারন সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের আহাম্মেদ চৌধুরী, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দারুস সালাম আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মাজহারুল আনাম, শাহ্‌ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার দেওয়ান আবদুল মান্নান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হানিফ, সিআইপি ড. আরিফ আহমেদ চৌধুরীসহ আরো বেশকিছু স্থানীয় নেতা। এছাড়া সাবেক কাউন্সিলর ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলও নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে পোস্ট দিয়েছেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *