জিয়া আমার মা-বাবার জন্য মোনাজাতের সুযোগটাও দেয়নি : প্রধানমন্ত্রী
১৭শ্রাবন ১৪৩০বঙ্গাব্দ,
০১ আগস্ট ২০২৩ইং
আব্দুস সাত্তারঃ
জিয়া আমার মা-বাবা ও ভাইবোনের জন্য মোনাজাতের সুযোগটাও দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর জিয়াউর রহমান ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেয়নি। মা-বাবা, ভাইবোনের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করব; সেই সুযোগটাও দেয়নি।
০১ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কৃষকলীগের স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের সময় আমি এবং আমার ছোটবোন বিদেশে ছিলাম। জিয়াউর রহমান আমাদের আসতে বাধা দিয়েছে। শেখ রেহানার পাসপোর্টটাও রিনিউ করে দেয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮১ সালে আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আমরা অনেক বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরে আসি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, আমাদের আত্মপরিচয়ের সুযোগ এনে দিয়েছেন। বাঙালি জাতি হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। সে পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তারপরেই সেই ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সাল আমাদের জাতির জীবনে একটি কালো অধ্যায়। ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছিল আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যে কোনো মানুষ তার আপনজন খুন হলে বিচার চায়, আর আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, আমাদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকারই ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না। খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেছেন, বিরোধী দল, সংসদে না থাকলেও তারা বক্তব্য দেয়- আমাদের নাকি পালানোর কোনো পথ থাকবে না। আমি এমন বক্তব্যদাতাদের উদ্দেশে বলতে চাই- শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের মুখে বড় বড় কথা আমরা নাকি পালানোর পথ পাবো না। তারা আমাদের নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মামলা করেছে, অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। গ্রেনেড হামলা করেছে। আমরা তো প্রতিশোধ নেইনি। এক ভাগ প্রতিশোধ নিলেও তাদের হদিস পাওয়া যেত না। আমরা প্রতিশোধ নেইনি কারণ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, তার বিরুদ্ধে এফবিআইয়ের প্রতিনিধি এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে, সেই মামলায় তার সাজা হয়েছে। খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। অথচ তাদের (বিএনপি) গঠনতন্ত্রেই আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারবেন না।
সরকারপ্রধান বলেন, যারা স্বাধীনতাবিরোধী, হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল, যুদ্ধাপরাধী ছিল, বঙ্গবন্ধু যাদের বিচার শুরু করেছিলেন, তাদের মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা হয়, বিভিন্ন পদ দেন জিয়াউর রহমান। তারপর খালেদা জিয়াও একই কাজ করেন। খালেদা জিয়া বলেছিল- প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও না কি কোনোদিন হতে পারবে না। আজকে কি হলো। দেশে ফেরার পর জনগণ আমাকে ক্ষমতায় এনেছে।
জিয়াউর রহমান জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় আসে, ওই ফারুককে ফ্রিডম পার্টি করার সুযোগ দেয়, রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে কর্নেল রশিদ, হুদা নিয়ে জনগণের ভোট চুরি করে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে। যে নির্বাচনে ২/৩ শতাংশ ভোটও পড়েনি। জনগণের ভোট চুরি করে ওই রশিদকে পার্লামেন্টের বিরোধী দলের আসনে বসায়। হুদাকে পার্লামেন্টের মেম্বার করে। তারা খুনিদের উৎসাহিত করে একের পর এক অমানবিক কাজ করে গেছে।
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।