জরায়ু ক্যান্সারের কারন, ১৬ টি লক্ষণ, ও পরামর্শ:
দিনবদল স্বাস্থ্য ডেস্কঃ
বাঙ্গালি নারীদের এক-চতুর্থাংশ জরায়ুর ক্যান্সারে ভুগছেন। বাংলাদেশের মেয়েরা সাধারণত এসব সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করতে চায় না। যে কারনে ক্যান্সার ধীরে ধীরে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সাধারনত লাসিকা ও রক্তের মাধ্যমে তা লিভার, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ সময়ই জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্তরা এমন সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন যে তখন আর কিছুই করার থাকে না। ফলে জীবনঘাতী এই ক্যান্সার কেড়ে নিচ্ছে বহু প্রাণ।
জরায়ু ক্যান্সারের কারণ:
মূল কারণ না জানা গেলেও নিম্নোক্ত রিক্স ফ্যাক্টরসমূহকে জরায়ু ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়-
২টি বয়সে বেশি দেখা যায়৷ ৩৫ বছরে এবং ৫০-৫৫ বছরে৷
অল্প বয়সে বিয়ে হলে (১৮বছরের নিচে) বা যৌন মিলন করে থাকলে।
২০বছরের নিচে গর্ভধারণ ও মা হওয়া।
অধিক ও ঘনঘন সন্তান প্রসব।
বহুকামিতা।
স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং জননাঙ্গের অপরিচ্ছন্ন অবস্থা।
বিভিন্ন রোগ জীবাণু দ্বারা জরায়ু বারে বারে আক্রান্ত হলেও জরায়ু ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি থাকে, যেমন – হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস এবং হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস।
জরায়ুর ক্যান্সারের লক্ষণ:
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগের লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে নিচের লক্ষণগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়-
১) দুই মাসিক এর অন্তর্র্বতী সময়ে হালকা রক্তপাত হওয়া,
২) মাসিকের সময় রক্তপাতের পরিমান স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি এবং দীর্ঘমেয়াদী হওয়া
৩) অনিয়মিত মাসিক হওয়া।
৪) মাসিক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১ বছ পরেও রক্তস্রাব দেখা যাওয়া।
৫) যৌনসঙ্গমের পর রক্তস্রাব হওয়া।
৬) যোনিপথে বাদামি অথবা রক্তমিশ্রিত স্রাবের আধিক্য দেখা দেওয়া।
৭) আচমকা ক্ষুধা কমে যাওয়া।
৮) সবসময় বমি বমি ভাব কিংবা বার বার বমি হওয়া
৯) পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা।
১০) গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য। হালকা খাবারের পরও ভরপেট অনুভব করা, পেটে অস্বস্তি লাগা, ইত্যাদি পেটের কোনো সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
১১) যৌনাঙ্গের চারপাশে চাপ চাপ বোধ হওয়া এবং ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা।
১২) অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা হঠাৎ করে ওজন অনেক কমে যাওয়া।
১৩) অভ্যস্ত থাকার পরেও যৌনমিলনের সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া।
১৪) অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা।
১৫) নারীদের মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরেও রক্তক্ষরণ হওয়া।
১৬) সাদা দুর্গন্ধযুক্ত যোনিস্রাব হওয়া।
একদিন বা একমাসে হঠাৎ করে জরায়ু-মুখে ক্যান্সার হয় না। জরায়ু মুখ আবরণীর কোষগুলোতে বিভিন্ন কারণে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে ক্যান্সারের রূপ নেয় এবং এই পরিবর্তন হতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। আমাদের দেশে জরায়ু-মুখ নিয়মিত পরীক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা এখনও গড়ে উঠেনি। এর ফলে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের ক্ষেত্রে শতকরা ৮০ ভাগ রোগীরা আসেন শেষ পর্যায়ে এবং ইতিমধ্যে ক্যান্সার ছড়িয়ে যায় এবং অপারেশন করা আর সম্ভব হয় না।
মূলত হিউমান প্যাপিলোমা ভাইরাস (ঐচঠ-১৬, ১৮) জরায়ুর ক্যান্সারের জন্য দায়ী। অল্প বয়সে বিয়ে হলে, দীর্ঘ সময়ব্যাপী (৫ বছরের বেশি সময়কাল ধরে ) জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খেলে (ঙঈচ) জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে ২০ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
ধূমপান করলেও এই ক্যান্সার হতে পারে। কারন সিগারেটে এমন এক ধরনের রাসয়নিক পদার্থ রয়েছে যা পবৎারী বা জরায়ুর কোষকে ধংস করে ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়ায়।
জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিকার:
রোগের চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিরোধ অর্থাৎ রোগটা হতে না দেওয়া হলো বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও সকল রোগের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সম্ভব হয় না, তবে জরায়ু-মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ ডাক্তার অথবা স্বাস্থ্যকর্মী সহজেই জরায়ু-মুখ দেখতে এবং পরীক্ষা করতে পারেন। ক্যান্সারপূর্ব অবস্থাধরা পড়লে সামান্য চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জরায়ু ফেলে দেবার প্রয়োজন হয় না এবং চিকিৎসার পরও সন্তান ধারণ সম্ভব। ভিজুয়াল ইন্সপেকশন অফ ছারভিক্স উইথ এছিটিক এসিড (ঠওঅ) এই পদ্ধতির জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব –ক্যান্সার হওয়ার আগে খালি চোখে জরায়ু মুখে কোনরকম ক্ষত বা চাকা দেখা যাবে না৷ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যে পদ্ধতিতে জরায়ু মুখের ক্যান্সারপূর্ব অবস্থাশনাক্ত করা হয় তাকে ভায়া বলে৷
জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসা:
দ্রুত রোগ ধরা পড়লে অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া যেতে পারে৷
কিন্তু দেরী হয়ে গেলে রোগ ছড়িয়ে পরবে৷
কেমোথেরাপি এবং রেডিও থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া যায়৷
প্রতিরোধঃ
প্রতি তিনবছর অন্তর স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে জরায়ু-মুখ অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে।
৩০ বছরের বেশি বয়স হলেই জরায়ু-মুখ অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে৷ তবে ১৮ বছরের পূর্বে এবং বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে ২৫ বছর বয়স হলেই জরায়ু মুখ পরীক্ষা করাতে হবে।
জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসার কিছু রকমভেদ রয়েছে। যাদের এখনও ক্যান্সার হয় নি অর্থাৎ ঢ়ৎব-পধহপবৎ ংঃধমব এ আছেন ,তাদের চিকিৎসা হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ষড়পধষ ধহধবংঃযবংরধ (স্থানিক অবশ)-এর মাধ্যমে করা হয়।এতে নিরাময়ের হার ৮০-৯৬%। আর যাদের শরীরে এই ক্যান্সার পুরোপুরি বাসা বেঁধে ফেলেছে তাদের জন্য ক্যান্সারের ধাপ অনুযায়ী সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মত বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও ৮০ শতাংশ ক্যান্সারের রোগী এমন সময় আসে যখন আর অপারেশন করে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হয়ে উঠে না। অথচ সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই একে সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।