খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত
ফিরোজ শাহী:
বিএনপি নেত্রীর বিদেশে চিকিৎসার জন্য পরিবারের আবেদনের বিষয়ে সরকার ইতিবাচক বলে জানা গেছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে আবেদন পর্যালোচনা করে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠানো হবে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে তাকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর সকালে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেন শামীম এস্কান্দার। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য জমা দিয়ে আসেন তিনি। রাতে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা পাসপোর্ট নিতে যোগাযোগ করেন। পাসপোর্ট পাওয়ার পর ভিসার জন্য যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনে জমা দেওয়া হবে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসক এবং তার পরিবারের সদস্যদেরও ভিসার জন্যও পাসপোর্ট জমা দেওয়া হবে। খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যে নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে।
এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য এবং শারীরিক খোঁজ নেওয়ার জন্য গতকাল দুপুরে মির্জা ফখরুল হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। আবার রাতেও তিনি ও দলের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার খোঁজ খবর নেন।
৬মে বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এ দিনই পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়াতে (রি-ইস্যু) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। ব্যাংকেও ফি জমা দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে তথ্য মিলেছে।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক (পাসপোর্ট ও ভিসা) সাইদুল ইসলাম বলেন, গতকাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার পাসপোর্টের আবেদন অধিদপ্তরে পৌঁছেনি। আবেদন পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপির আবেদন জমা নেওয়া বন্ধ রয়েছে। ই-পাসপোর্ট আবেদন জমা নেওয়া ও বিতরণ করা হচ্ছে। তবে ই-পাসপোর্ট পাওয়া প্রক্রিয়াগত কারণেই সময়সাপেক্ষ। বিশেষ ধরনের এই পাসপোর্টে আবেদনকারীর ১০ আঙুলের ছাপ এবং চোখের মণির ছাপ নেওয়া হয়। খালেদা জিয়া করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এসব কার্যক্রমও শেষ করা সম্ভব হবে না। এ জন্য তাকে এমআরপি নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে তার পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। খালেদা জিয়ার পক্ষে তার পরিবারের কেউ পাসপোর্টের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও সেটি যাচাই-বাছাই শেষে নিয়ম অনুযায়ী অধিদপ্তরে জমা হবে। এমআরপি বন্ধ থাকার পরও এই পাসপোর্টের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমোদন লাগবে।
এক কর্মকর্তা বলেন, খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে জামিনে থাকায় তার পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়েরও অনুমোদন নিতে হতে পারে। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে হয়তো আবেদন গ্রহণের পর দ্রুত রি-ইস্যু পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হবে।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত ৩ মে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনায় আজ শুক্রবার বাদ জুমা সারাদেশে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিভিন্ন উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হবে। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শুক্রবার পবিত্র জামাতুল বিদা। এদিন সারাদেশে সব মসজিদ, অন্যান্য ধর্মের বিভিন্ন প্রার্থনালয়ে এবং দলের সব ইউনিটে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তির জন্য দোয়া করা হবে। সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করছি- জনগণকে সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দোয়া চাইবেন।