কিছু কিছু গুম আছে, যারা বাসায় বসে আছেন: আইনমন্ত্রী
২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২০ বঙ্গাব্দ,
১১ জুন ২০২৩ ইং,
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
আইনমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু গুম আছে, যারা বাসায় বসে আছেন। কিন্তু গুমের অভিযোগ তুলছেন।
গুমের অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, গুম নিয়ে যখন কথা হয়, তখন তারা গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন। তখন সংবাদপত্র বলা শুরু করল, সরকার তাদের হয়রানি করছে। তখন তাদের পরিবারকে বলা হলো, পুলিশকে জানান। কিন্তু তারা (পরিবার) সাড়া দিল না। এতে তাদের কী করার আছে! তারা তো সহযোগিতা করছে না।
ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে রোববার আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইনমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বক্ততা করেন। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।
মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার, ই-জুডিয়ারি, ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টসহ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, সাইবার ক্রাইম বন্ধে পৃথিবীর বহু দেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি সংক্রান্ত আইন রয়েছে। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এটি নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। তারাও আইনটি রাখার কথা বলেছেন। তবে কিছু সংশোধনীর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এখন এ আইনে মামলা হলেই যেন কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি সেল গঠন করা হয়েছে। মামলা হলে, আগে সেখানে এটি পরীক্ষা করা হবে। ফ্রাইমা ফেসি কেইস (অপরাধের প্রাথমিক উপাদান) দেখে পরবর্তী কার্যক্রমে আগাতে হবে, যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন এবং কেউ যেন আইনটি অপব্যবহারের সুযোগ না নিতে পারেন।
জামায়াতে ইসলামীকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতকে দোষী বলা যাবে না। বিচার করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত রায় না হয়, দোষী সাব্যস্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি বলতে পারবেন না, জামায়াত নিষিদ্ধ। আইনমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব তথ্য এসেছে, তাতে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে। এ সংক্রান্ত আইনটি সংশোধনের জন্য কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি বিষয়ে তিনি পিটার হাসকে জানিয়েছেন, এটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক। সেটা যার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হোক। যদি বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও এ ব্যবস্থা নেয়া হয়, সেক্ষেত্রেও তিনি বলবেন, এটি অপমানজনক।
আনিসুল হক বলেন, তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, এই ভিসা নীতি যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। আর যদি ইচ্ছেমতো একটি দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়, তাহলে তাদের আপত্তি আছে।
তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, ভিসা নীতি নিয়ে সরকার বিচলিত নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার আছে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই ওই দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে কেন্দ্রে গিয়েছেন।
নির্বাচনকালে ছোট সরকার হবে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, সংসদে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব আছে, তাদের নিয়ে নির্বাচনকালে একটি ছোট সরকার গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য তার কাজ করবে। আর সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত না নিয়ে দৈনন্দিন কাজ করবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, এর আগে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে অঙ্গীকার করেছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমি এই গুজব শুনেছি যে খালেদা জিয়ার মুক্তির ফাইল নাকি আইন মন্ত্রণালয়ে চলে এসেছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারি আমার মন্ত্রণালয়ে এরকম কোনো ফাইল আসে নাই এবং আমি এটাও বলতে পারি যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও এরকম কোনো ফাইল উঠেছে বলে আমি জানি না।