‘একদফায়’ বিএনপি, কৌশলী আন্দোলনে আ.লীগ

0

২৩ আষাঢ় ১৪৩০ বঙ্গাব্দ,
০৭ জুলাই ২০২৩ইং,
আব্দুস সাত্তারঃ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের শেষের দিক থেকে আন্দোলনে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে আসছে দলটি। তাদের সঙ্গে সমমনা দল এবং জোটও সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছে।
আন্দোলনের মাঠে নামার চেষ্টা করছে জামায়াতে ইসলামীও। এসব দিনে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগও। জাতীয় নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, বিরোধী পক্ষ আন্দোলনে ততই গতি বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইতোমধ্যে ‘একদফা’ আন্দোলনের যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠ নিজেদের অনুকূলে রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনরা কৌশলী ভূমিকা নিতে চাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন তারা আন্দোলনে বাধা দেবেন না। আবার ভোটের আগে বিরোধীদের একেবারে ফাঁকা মাঠ ও ছাড়া হবে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে তারা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবেন।

আবার ক্ষমতাসীন দল হিসাবে তারা চান না পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হোক। আন্দোলনের নামে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা হলে তা প্রতিহতের প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে নির্বাচন পর্যন্ত নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সরব থাকবে দল ও সহযোগী সংগঠন। শরিক দল ও সমমনাদেরও কাজে লাগাতে চায় তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমরা আমাদের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। একই সঙ্গে বিএনপির কর্মসূচির দিকেও নজর রাখছি। তারা যদি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন করে, তাহলে আমরা রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করব। আর যদি তারা সন্ত্রাসের পথে হাঁটতে চায়, তার জবাবও সঠিকভাবেই পাবে। একদিকে আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতিও আছে আবার ওদের আন্দোলন ঠেকানোর প্রস্তুতিও আছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা নির্বাচন সামনে রেখে কাজ করছি। আমাদের উন্নয়ন-অর্জন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছি। এ মাসে আমাদের সাংগঠনিক কাজগুলো চালাব। এরপর জাতীয় শোকের মাস আগস্টে মাসব্যাপী কর্মসূচি আছে।

এরপর আমরা আমাদের প্রচার-প্রচারণার কাজগুলো আরও ব্যাপকভাবে শুরু করব। আর যারা একদফা, ১০ দফা, ২৭ দফার কথা বলে-বাস্তবে আসলে তারা নির্বাচন করতে চায় না। এগুলো নৈরাজ্য ও হট্টগোল সৃষ্টির একধরনের অপচেষ্টামাত্র। তিনি আরও বলেন, আমরা শান্তিশৃঙ্খলায় বিশ্বাস করি। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া মেনে রাজনীতি করি। আওয়ামী লীগ দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে সবদিক মাথায় রেখেই মানুষের শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষার লক্ষ্য নিয়েই তাদের পাশে থাকব। যে কোনো অপরাজনীতি, অপশক্তির হাত থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষার প্রচেষ্টা আমাদের আছে এবং থাকবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, এই মুহূর্তে কর্মসূচি বা আন্দোলনে কোনো দলকে সরাসরি বাধা দিলে দেশে ও দেশের বাইরে নেতিবাচক বার্তা যাবে। ক্ষুণ্ন হবে ভাবমূর্তি। আবার নির্বাচনের আগে বিরোধীদের একেবারে ফাঁকা মাঠে ছাড়া যাবে না। ফলে কৌশলে তাদের আন্দোলন মোকাবিলা করতে হবে।

এছাড়া নির্বাচনি পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে হবে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে সব রাজনৈতিক দলকে ভোটে আনার চাপও রয়েছে। ফলে একদিকে রাজপথে থেকেই আন্দোলন মোকাবিলা করতে হবে। আবার আন্দোলনের নামে বা আন্দোলন মোকাবিলা করতে গিয়ে যেন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, ক্ষমতাসীন দল হিসাবে সেদিকেও নজর রাখতে হবে আওয়ামী লীগকেই। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আগামী দিনের নিজেদের কর্মপরিকল্পনা সাজাচ্ছে দলটি।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, আমরা সরকারে আছি, আমরা চাই দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে। বিএনপি এতদিন যে আন্দোলন করেছে, সেখানেও কিন্তু সরাসরি বাধা দেওয়া হয়নি। আমরা আমাদের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিলাম। এখন সামনে নির্বাচন। তারা একদফা আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ারও নানা শঙ্কা রয়েছে। ফলে সামনের দিনগুলোয় আমাদের আরও সতর্ক হয়ে পথ চলতে হবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, দেশে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা করে কেউ যেন স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিনষ্ট করতে না পারে, সেজন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে কেন্দ্রের দেওয়া নির্দেশনা তৃণমূলে পৌঁছানো হয়েছে। পাশাপাশি রাজপথে ছাড় না দিতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ঘিরে থাকবে বাড়তি সতর্কতা ও প্রস্তুতি। নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে জুলাইজুড়েও অব্যাহত থাকবে শান্তি ও প্রতিবাদ সমাবেশ। এর সঙ্গে থাকবে বিক্ষোভ মিছিলসহ অন্যান্য কর্মসূচিও। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নানা কর্মসূচি নিয়ে ১৪ দলীয় জোটকেও মাঠে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

আবারও জেলায় জেলায় শুরু হবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি জনসভা। এই সময়ে নানা সভা-সেমিনারেরও আয়োজন করা হবে। বিভিন্ন পেশাজীবী ও কৃষকদের নিয়েও সমাবেশের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ।

ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে সারা দেশে ছাত্র-যুব সমাবেশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি থাকবে শোকের মাস আগস্টে। সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে গণসংযোগ কর্মসূচি। সেখানে তুলে ধরা হবে সরকারের উন্নয়ন-অর্জন এবং বিএনপি-জামায়াতের ‘অপকর্ম’।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *