আমাদের বাড়িতে যারা খেয়েছে তারাই বেইমানি করেছে: প্রধানমন্ত্রী

0

০১ ভাদ্র ১৪৩০বঙ্গাব্দ,
১৬ আগস্ট ২০২৩ইং
আব্দুস সাত্তারঃ

১৫ আগস্টের আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যারা ছিল, তার বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করেছে, ঘুমিয়েছে তারাই বেইমানি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই বেইমান-খুনিদের পুরস্কৃত করেছে জিয়াউর রহমান।

১৬ আগস্ট বুধবার রাজধানীর বিআইসিসিতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

সেদিন ঘাতেকের বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। ইতিহাসে এই ধরনের জঘন্য ঘটনা বাংলার মাটিতে ঘটে যায়। এটি সেই কারবালার ঘটনাকেও হার মানায়।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ ও মহামারীর মধ্যেও উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এছাড়া কেনা গোলামদের ক্ষমতায় বসানোর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জনগণকে সর্তক থাকার নির্দেশ দেন। এবং সঠিক জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা। সেদিন ঘাতকের বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। ইতিহাসে এই ধরনের জঘন্য ঘটনা বাংলার মাটিতে ঘটে যায়। এটি সেই কারবালার ঘটনাকেও হার মানায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন আর গণতন্ত্র নয়, আমেরিকার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাটাকে ব্যাহত করা। পার্বত্য চট্টগ্রামেও নানামূখী ষড়যন্ত্র চলছে। আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই তারা নানাভাবে এই চক্রান্তটা চালাচ্ছে। এটা আমি বুঝতে পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। এরপরই সংবিধান সংশোধন করে তাদের বিচার হবে না বলে আইন পাস করেছে। খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করে পুরস্কৃত করেছে, তাদের চাকরি দিয়েছে, অর্থ দিয়েছে, সম্পদ দিয়েছে।

জিয়ার পর এরশাদও একই কাজ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি খুনি ফারুক-রশীদদের রাজনৈতিক দল করার সুযোগ দেন। ১৯৮৮ সালে এরশাদ যে নির্বাচন করে, ওই নির্বাচনে ফারুককে রাষ্ট্রপতি পদ দেয়ার প্রস্তাব দেয়।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জয় বাংলা স্লোগান ও ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘাতকরা ইতিহাস বিকৃত করে। যে জয় বাংলা স্লোগানে দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, সেই স্লোগান নিষিদ্ধ করে দেয়। অথচ এই ঘাতকরা আমাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করেছে, ঘুমিয়েছে। আবার তারাই বেইমানি করেছে।’

জিয়াউর রহমান মানুষের ভোট, ভাত ও কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন মতপ্রকাশের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। একটা মাত্র রেডিও ও হাতে গোনা কয়েকটি পত্রিকা সব তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ক্ষমতায় এসে সেনাবাহিনীর হাজার সৈনিককে নির্মমভাবে হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান। একটা করে ক্যু করেছে, আর হত্যা করেছে। তাদের বিচারও হয়নি। সরাসরি ফাঁসি হয়েছে। এমনও দিন গেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একই সঙ্গে ১০ জন করে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। সারা দেশের কারাগারে এমন হয়েছে। সবাইকে যে ফাঁসি দিয়েছে এমন নয়, কাউকে কাউকে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে।

‘উর্দি পরে ক্ষমতায় বসে নিজেকে রাজনীতিবিদ বানানোর চেষ্টা করেন জিয়া। তিনি হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে নির্বাচন দেন, সংবিধান স্থগিত করে তিনি ওই নির্বাচন করেন। ভোট কারচুপি, ভোট চুরি তো তখন থেকেই শুরু। এরপর বিএনপি নামে দল গঠন করে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, মীর জাফর যখন বেইমানি করে তিন মাসও ক্ষমতা থাকতে পারেনি। দুই মাসের মাথায় তাকে চলে যেতে হয়েছিল। একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। মোস্তাককে বিদায় আর জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় বসে। আরেক দিকে সেনাপ্রধান আবার রাষ্ট্রপতি। সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এতে সূচনা বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ এ বীরপুরুষ কর্নেল জামিল, আমরা সবাই কাপুরুষ। আমাদের যাদের বঙ্গবন্ধু ডেকেছিলেন, ভয়ে সাড়া দেইনি। আপনাদের বীরপুরুষ বলা যাবে? আমরা কাপুরুষ। ইতিহাসে এ সত্যকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আমাদের বিবেকের কাছে অপরাধী। বঙ্গবন্ধুর জন্য আমরা বড় পদে এসেছি, বড় নেতা হয়েছি। জামিল যে সাহস, আনুগত্য, দেশপ্রেম দেখিয়েছিলেন সেটা কি কোনো পলিটিশিয়ান দেখাতে পেরেছেন? পারেননি। এটাই সত্য।

স্মরণসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বক্তব্য দেন।

সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল আওয়াল শামীম।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *