আওয়ামী লীগের রাজনীতি নির্বাচনমুখী

0

২৬ আষাঢ় ১৪৩০বঙ্গাব্দ,
১০ জুলাই ২০২৩ইং
আব্দুস সাত্তারঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৫ মাস বাকি। এর মধ্যে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কী না তা পরিস্কার না হলেও এখন থেকেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ফলে দলটির সকল প্রকার রাজনীতি নির্বাচনমুখী হয়ে উঠেছে। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনায় এমন কর্মকা- চলমান রয়েছে বলে দলটির নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচনের সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য দলীয় প্রধান নির্দেশনা দিয়েছেন। এ জন্য যা যা করনীয় সব করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ২২ জুন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের বৈঠকে নির্বাচনের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে বলে এর কয়েকদিন আগে থেকেই দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়ে আসছিলেন তিনি। এর পর থেকে হঠাৎ ঝিমিয়ে পরা আওয়ামী লীগ চাঙ্গা হয়ে উঠে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলটির সদস্য সংগ্রহ ইতোমধ্যে খুব শুরু সফলতার সঙ্গে চলমান রয়েছে। এবারও আগেবারের মত তরুন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এই সদস্য সংগ্রহ অভিযান দলটি নির্বাচনের আগে আরও বেগবান করতে চায়। তরুন ভোটারদের ছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবিদের আওয়ামী লীগের সদস্য করা হচ্ছে। বলে দলটির সম্পাদকম-লীর এক নেতা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দলীয় ঐক্যে। ফলে সারা দেশের জেলা জেলায় দলীয় নেতাদের মধ্যে যে কোন্দল রয়েছে তা নির্বাচনের আগে নিরসনে এখন কাজ করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। যে সব জায়গার মধ্যে তারা ব্যর্থ হবেন সে জায়গায় প্রয়োজনে দলীয় হাইকমান্ড হস্তক্ষেপ করবেন বলে কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া দলের ত্যাগী অনেক নেতা অভিমান করে দলীয় কর্মকা- থেকে নিষ্কিয় রয়েছেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন। তাদের দলীয় কর্মকা-ে যুক্ত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, দলের অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী পদ বঞ্চিত হয়ে নিষ্কিয়, তাদের পদে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। কারণ এই ত্যাগী নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রাণ, তারাও দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারবে না। এ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদেরও ক্ষমা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী আগস্ট মাস জাতীয় শোকের মাস। এ মাসে এমনিতেই বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা। এর বাইরে নির্বাচন উপলক্ষ্যে ইস্যু বিভিন্ন রাজনৈতিক টানা কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এর পর আগামী সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের অর্জন ও উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে জেলায় জেলায় সফর করবে আওয়ামী লীগ নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগেই একদিকে জনগণের পাশে দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দলটির নেতারা জনগণকে বোঝাতে চান যে দেশের উন্নয়নে তাদের দলের কোন বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা বিএনপির আন্দোলনের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে আগামীতে কর্মসূচি দেব না। আসলে আমরা জনগণের কাছে যেতে চাই। আমরা আমাদের কথা বলে জনগণকে প্রস্তুত করতে চাই।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, টানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকা গেলে বিএনপির আন্দোলনেও আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মীরা মাঠে থাকবে। কিন্তু যেহেতু বিএনপি নেতারা অতীতে অভিযোগ করে আসছে তাদের ওপর হামলার, আর মার্কিন ভিসানীতির পরে তাই বিএনপির কর্মসূচিতে যে কোন প্রকার হামলা না করতে সারা দেশের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা রয়েছে দলের। তবে যদি বিএনপি হামলা করে, কিংবা দেশের মানুষের কোন সম্পদে হামলা করে তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে গত কয়েক মাস থেকে বক্তব্য দিয়ে আসছেন দলটির নেতারা।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছেন, দলীয় কেন্দ্রীয় নেতারা ইতোমধ্যে দলের সহযোগী সংগঠনগুলোকে তাদের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে তাগাদা দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর যারা কমিটি দেয় নি তাদের কাজও শেষ করতে বলেছেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব থাকলে তা মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুন স্মৃতির দ্বন্দ্বের মধ্যে তাদের নিয়ে আলাদাভাবে বসেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের সকল ঝামেলা মিটমাট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া দ্রুত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার নির্দেশনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সেপ্টম্বরে সারা দেশে সরকারের এতদিনে অর্জন ও সাফল্য তুলে ধরে জনসংযোগ করতে চায় দলটি। এ কর্মসূচিতে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জেলায় জেলায় যেমন জনসংযোগ হবে তেমনি বিভাগীয় ও একেবারে তৃনমূল পর্যায়েও জনমত তৈরীতে কাজ করবে দলটি। এ কর্মসূচিগুলোতে সরকারের আমলে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে যে অর্জন তা তুলে ধরে দেশেকে বোঝানো হবে যে আওয়ামী লীগের আমলে কি কি বাস্তব সুফল দেশের মানুষ পেয়েছে। এ ছাড়া নতুন প্রজন্মকে নিয়ে আলাদভাবে কর্মসূচি রাখার ইচ্ছা আছে আওয়ামী লীগের। সকল কর্মসূচি দলীয়ভাবে বসে ঠিক করা হবে, কোন কর্মসূচিগুলোতে দলীয় প্রধান যাবেন তাও নির্ধারণ করা হবে শিগগিরই।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী যাচাইয়ে অনেক আগেই জরিপ শুরু করেছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যে প্রার্থী জয়ী হয়ে আসতে পারবে এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। এর পর থেকে সকল দলীয় নেতারা আগের চেয়ে অনেক বেশি চাঙ্গাভাব নিয়ে মাঠে নেমে পরেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতোমধ্যে তাঁর নিজ এলাকা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এদিকে সরকারের সাড়ে ১৪ বছরের উন্নয়ন কর্মকান্ড দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে আগামী সেপ্টেম্বরে মাসব্যাপী গণসংযোগ করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। গত বুধবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথ সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
গত ঈদের আগে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দলীয় নেতাদের এলাকা গিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনা মেনে ঈদে নিজ নিজ এলাকায় গিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। গত ঈদের আগে থেকে ব্যাপক এলাকামুখী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সকল সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা। যারা ৩ মাসেও একবার এলাকায় যেতেন না তারাও ঘন ঘন এলাকায় যাওয়া শুরু করেছে। এলাকায় গিয়ে অনেকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা- জোরদার করেছেন। তবে অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আবার এলাকায় গিয়ে সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধেই বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন। ফলে অনেক এলাকায় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নতুন করে দ্বন্দের সূত্রপাত হচ্ছে। এ বিষয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যারা সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে এমন বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করবে তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। তিনি বলেন আমাদের নেতা স্পষ্টভাবে এ বিষয়ে বলে দিয়েছেন, যারা এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হবে,তাদের ভবিষ্যতে নমিমেশন পাবে না। তিনি বলেন, আমি তো মনে করি যারা এমন কাজ করবে তারা দলের নীতি আদর্শে বিশ্বাস করে না।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। সে সভায় তিনি হাটে-মাঠে-ঘাটে, চায়ের দোকানের আড্ডায় সরকারের উন্নয়নের কথাগুলো বলতে হবে নির্দেশনা দেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, দলীয়ভাবে কারা মনোনয়ন পাবে তা ঠিক করতে জরিপ করাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জড়িপে যারা এগিয়ে থাকবেন তাদের আগামীতে মনোয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এক সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বলেন, যারা জনপ্রিয়, সমাজে যাদের গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে এমন ব্যক্তিরাই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। আর এ জন্য কারা জনপ্রিয় তা নির্ধারণে আমাদের নেত্রী অনেক আগে থেকেই একটি জরিপ চালাচ্ছেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *