১৮ ঘণ্টা পর লঞ্চ উদ্ধার, উঠে এল আরও ২২ লাশ
জেলা প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ২৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা পর ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। লঞ্চ উদ্ধারের পর সেখান থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসা হয়। লাশ উদ্ধারের পর শীতলক্ষ্যা নদীর দু’পাড়ে থাকা স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।
আজ সোমবার (৫ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ডুবে যাওয়া ‘এমবি রাবিত আল হাসান’ নামের লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। এরপর একে একে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।
লঞ্চডুবির ঘটনায় রোববার (৪ এপ্রিল) রাতে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। রাতেই ঘটনাস্থলে হাজির হন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক। তিনি ঘটনার সার্বিক খোঁজখবর নেন। রাতে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হলে তাদেরকে শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরসহ দাফন করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে নগদ ২৫ হাজার করে টাকা দেয়া হয়। আর লঞ্চডুবির ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদসস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারের নিরাপত্তকর্মী মোহাম্মদ হালিম বলেন, এসকেএল-৩ (এম ০১২৬৪৩) নামের একটি কোস্টার জাহাজ পেছন থেকে লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে অন্তত ২০০ মিটার টেনে নিয়ে যায়। এরপর লঞ্চটি যাত্রীসহ ডুবে যায়। লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে কোস্টার জাহাজটি দ্রুত পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী লঞ্চের যাত্রী আবুল কালাম জানান, সন্ধ্যা প্রায় ৬টায় যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে এমএল রাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর লঞ্চটি বন্দর থানার মদনগঞ্জে নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা সেতু-৩-এর কাছে পৌঁছালে পেছন থেকে একটি বালুবাহী জাহাজ লঞ্চটিকে ধাক্কা দিলে সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ডুবে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই জাহাজটি দ্রুতগতিতে পালিয়ে যায়। লঞ্চটি নিমজ্জিত হলে ১৫-২০ জন যাত্রী সাঁতরিয়ে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও ভেতরে থাকা যাত্রীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা বলা যাচ্ছে না।
লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান জানান, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চটিও উদ্ধার করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, শীতলক্ষ্যা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পর বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। রোববার রাত থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হয়তোবা ২-৩ জন নিখোঁজ থাকতে পারেন। তাদের সন্ধানের চেষ্টা চলছে।