হাতে গোণা কিছু মানুষের মন্তব্যে এত বড় সিদ্ধান্ত, সত্যিই ভাবনার!

0

একটা সহজ প্রশ্নই করি, আপনি কখনো বিদ্যানন্দ নিয়ে সমালোচনা দেখেছেন? তাদের ওই পোস্টের আগে বিদ্যানন্দ আর ধর্মকে মিশিয়ে কোন কিছু? আপনার হাতের কাছে, মেসেঞ্জারের চ্যাটলিস্টের প্রথম দশজনকে জিজ্ঞেস করুন, কমপক্ষে নয়জনই দেখেনি।

কেবল আপনি কিংবা আশেপাশের মানুষজন বাদ দিন। তাদের কমেন্টবক্সই দেখে আসুন। কোথাও তেমন কিছু নেই। বিদ্যানন্দ মহৎ কাজ করছে, তাদের উদ্দেশ্য সৎ। লাখ লাখ মানুষ তাদের অভিবাদন জানাচ্ছে এবং তাদের বেশির ভাগই মুসলমান, এটাও সত্যি। নিজেদের পোস্টেই তারা উল্লেখ করেছে সেসব।

ধর্মীয় পরিচয় একেবারে ভুলে গিয়ে অসংখ্য মানুষ তাদেরকে বিশ্বাস করেছে। সেসবের প্রতি কি অমর্যাদা করা হলো না? একেবারেই গুঁটি কয়েক মানুষ, হাতে গোণা কিছু মানুষের মন্তব্যে এত বড় সিদ্ধান্ত, সত্যিই ভাবনার।

উদাহরণ দিলে হাজারজনের দেয়া যায়। উঠতে, বসতে, ঘুমাতে সবসময় যারা গালি শুনেন। ভালো কাজ করে গালি খাওয়া মানুষের সংখ্যাও অনেক। ভালো কিংবা খারাপ যেকোনো কিছুতেই কেউ না কেউ আপনার বিরুদ্ধে থাকবেই, সমালোচনা করবেই। এটা বাংলাদেশ না পুরো পৃথিবীতেই।

কিছু মানুষের কাজই হচ্ছে পরনিন্দা করা, বাকিদের দায়িত্ব তাদের পাত্তা না দেয়া। আপনি তাদের পাত্তা দিলেন, একটা মহৎ কাজের অংশ হয়েও। স্পেসিফিক একটা ধর্মকে সামনে নিয়ে এলেন।

এরপর একটা গোষ্ঠী, যারা সবসময় প্রস্তুত থাকে ওই নির্দিষ্ট ধর্মকে ধুয়ে দিতে, তাদের সুযোগ করে দিলেন। এই দেশে ধর্মান্ধদের চেয়ে উগ্র একটা গোষ্ঠী এমনিতেও তৈরি হয়ে আছে, তারা কেবল সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। বিদ্যানন্দ তাদের সেই সুযোগটা করে দিলো।

একই পোস্টে সাংঘর্ষিক বক্তব্য দিয়েও তারা সেটা করে ফেলতে পারলো। একদিকে বলছে, বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার ধর্মান্ধদের কারণে পদত্যাগ করছেন না, অথচ পোস্টের শুরুতে ঠিকই আবার সেই কারণটাকে উল্লেখ করলেন। তিনি পুরোপুরি ছেড়েও যাচ্ছেন না বিদ্যানন্দ, আরেকটু ছোট পদ বেছে নিচ্ছেন।

স্রেফ কারো উপর রাগ করলে, পুরো সংগঠনই ছেড়ে দেয়ার কথা। যা কারোই কাম্য না। তবুও একটা কারণ সামনে এনে দিলো বিদ্যানন্দ। সুযোগসন্ধানীদের আশাটা পূরণ করে দিলো। হাতে গোণা কয়েকটা মানুষকে পাত্তা দিয়ে, এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে চূড়ান্ত ম্যাচিউরিটির অভাব প্রমান করলো।

অথচ এই দেশের মানুষ বিদ্যানন্দে আশা দেখেছিল। নির্বাচনের পোস্টার কীভাবে কাজে লাগাতে হয় তারা সেটা দেখে গর্ব করছিল বিদ্যানন্দের জন্য। আরও অনেক কিছুই ছিল এমন। সবারই আশা, থাকবে এসব চিরদিন। মানুষ দেখবে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন।

শেষ একটা কথা দিয়ে ইতি টানি। এই পোস্টের সঙ্গে যার সম্পর্ক প্রায় শূন্য। আমার বরাবরই মনে হয়, এই দেশের একটা গোষ্ঠী আছে। যারা যেকোনোভাবেই হোক, একটা প্রজন্মের মনে একটা নির্দিষ্ট ধর্ম সম্পর্কে নেতিবাচকতার বীজ বপন করতে চায়।

তারা প্রমান করতে চায়, ইসলাম মানেই সংঘাত, জঙ্গিবাদ আর উগ্রতা। অথবা ইসলাম মানে ধর্মান্ধতা, বাড়াবাড়ি আর কিছু হুজুরের মিথ্যা কথার ফুলঝুঁড়ি। অথচ ইসলাম মানে শান্তি, মানুষের কল্যাণ আর ভালোবাবাসা। তারা তাই বরাবরই ব্যর্থ হয়।

লেখক: মাহমুদুল হাসান পাপ্পী, সাংবাদিক।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *