বৃষ্টির কবলে রাজধানী
১৮ আষাঢ় ১৪৩০ বঙ্গাব্দ,
০২ জুলাই ২০২৩ইং,
মহানগর প্রতিনিধিঃ
ঈদের দিন থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। সে বৃষ্টি ছিল গতকালও। ফলে টানা বৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়কও। এতে ঈদের ছুটিতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। অনেকে ঈদের ছুটিতে ঘরবন্দি কাটিয়েছেন। অন্যদিকে ঈদের দিনে কোরবানির বর্জ্য ড্রেনে ফেলায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয় বিভিন্ন এলাকায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা বৃষ্টির কারণে পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আজিমপুর কলোনিতে পুকুরের পানি বেড়ে ও বৃষ্টির পানি সড়ক থেকে সড়তে না পারায় হাঁটুসমান পানি জমেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় সড়কের পানি ঢুকছে বাসায়ও। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সরকারি কর্মকর্তারা। অন্যদিকে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে মিরপুরের কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকায়। এ এলাকায় পানি দুই দিন ধরেও সরেনি। এতে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। এছাড়া ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশে, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, গ্রিনরোডে, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
সিএনজি অটোরিকশার চালক হাবিবুর মিয়া বলেন, বৃষ্টি শুরুর কিছুক্ষণ পরেই ধানমন্ডি, শুকরাবাদের কিছু সড়কে পানি জমে যায়। এর মধ্যে গাড়িতে যাত্রী নিয়ে আসার সময় ইঞ্জিন হঠাত্ বন্ধ হয়ে যায়। পরে যাত্রী নামিয়ে কিছুদূর গাড়ি ঠেলে নিয়ে আসতে হয়েছে। পরে গাড়ি স্টার্ট নিয়েছে। হাতিরঝিল হয়ে গুলশানের দিকে আসার সময়ও অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা দেখেছি। অন্যদিকে পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোডের জলাবদ্ধতার বর্ণনা দিয়ে আরেক উবার চালক খোরশেদ আলম বলেন, একটা ট্রিপ নিয়ে পুরান ঢাকায় গিয়েছিলাম। ফেরার পথে পুরো সড়ক অলিগলিতে জলাবদ্ধতা দেখেছি। কোথাও কোথাও আবার হাঁটুপানিও জমেছে। এর আগে ঈদের দিন যত্রতত্র কোরবানির কারণে সেই বর্জ্য ড্রেনে ফেলায় পশুর রক্ত ও পানি সড়কের মধ্যে জমে যায়। এতে লাল রং ধারণ করে সড়কগুলো। তবে দুপুরের পর অধিকাংশ রাস্তা ও সড়কের পানি নেমে যাওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির বর্জ্য ফেলার জন্য ব্যাগ দিলেও সেটি কোনো কাজে আসেনি। পশুর বর্জ্য নির্ধারিত জায়গা বা ডাস্টবিনে না ফেলে ড্রেনে ফেলায় তা ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেও অনেকটা অচল করে দেয়। পশুর এই কঠিন বর্জ্য প্রতি বছরই কোরবানির সময় অনেক জায়গায়ই ড্রেন আটকে দেয়।
সিটি করপোরেশন জানায়, এবার ঈদে ঢাকায় কমপক্ষে ৫ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। এই বর্জ্য অপসারণের জন্য দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে সবাই মাঠে ছিলেন। আর কোরবানির আগের দিন ১১ লাখ প্ল্যাস্টিক, পলিব্যাগ ও বর্জ্য ব্যাগ বিতরণ করেছে সিটি করপোরেশন। বিতরণ করেছে ব্লিচিং পাউডার। বেলা ২টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সিটিতে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়। ঢাকার দুই সিটিতেই কন্ট্রোল রুম এবং হটলাইন চালু করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল-ইসলাম জানান, আমরা আগে থেকেই প্রচার করেছি। বর্জ্য ব্যাগ বিতরণ করেছি। তারপরও লোকজন সচেতনতার অভাবে বর্জ্য সংরক্ষণ করে ডাস্টবিনে না ফেলে ধুইয়ে ফেলেছে। ড্রেনে ফেলছে। এর ফলে এটি ড্রেনে আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে নাড়িভুঁঁড়িও ফেলে দিয়েছে যা ড্রেনে গিয়ে পড়ছে। এটা একটা বড় সমস্যা। আমরা যে বর্জ্য ব্যাগ দিয়েছি তা ঘরে রেখে দিয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমে গেছে আর সেই পানিতে পশুর রক্ত মিশে একাকার হয়ে গেছে। নগরের বেশ কিছু এলাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যত্রতত্র বর্জ্য না ফেললে দ্রুত পানি সরে গিয়ে এমন পরিস্থিতি হতো না।
এর আগে কোরবানির সময় দুই সিটি করপোরেশন কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করেছিল। বাসায় মাংস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। আর দুই সিটিতে দুটি আধুনিক কসাইখানা তৈরি করা হয়েছে। আরো দুটির কাজ চলছে। কিন্তু মানুষের নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি করার আগ্রহ এখনো তৈরি হয়নি বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের। তিনি বলেন, আমরা আগে ১২৫টি স্পট নির্ধারণ করেছিলাম কোরবানির পশু জবাই দেওয়ার জন্য। তখন মাত্র সাতটি স্পটে ১১টি পশু কোরবানি দেওয়া হয়। আমাদের পশু কোরবানির জন্য আধুনিক কসাইখানাও আছে। কিন্তু মানুষ ঐসব নির্দিষ্ট এলাকায় পশু কোরবানি দিতে উৎসাহী নয়। সে তার বাড়ি বা বাসার সামনেই কোরবানি দিতে চায়। তবে নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি চালু করা গেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হতো।
তিনি বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছি ড্রেনে, নালায় কোরবানির পশুর বর্জ্য ফেলায়। আমরা বর্জ্য রেখে তা ডাস্টবিন বা আমাদের পচ্ছিনন্নতাকর্মীদের দেওয়ার জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার বর্জ্য ব্যাগ বিতরণ করেছি। কিন্তু কোরবানির দিন দেখলাম ঐ ব্যাগে বর্জ্য না রেখে মাংস রাখছে। আর বর্জ্য ফেলে দিচ্ছে রাস্তায় ড্রেনে। এ কারণে ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যায়।