গোসাইরহাটে বিদ্রোহীর জয়

0

০৩ শ্রাবন ১৪৩০বঙ্গাব্দ,
১৮ জুলাই ২০২৩ইং

জেলা প্রতিনিধিঃ
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট পৌরসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল আউয়াল সরদার। তিনি নৌকা প্রতীক মনোনিত প্রার্থী জাকির হোসেন দুলালকে হারিয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
১৭ জুলাই সোমবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল আউয়াল সরদার (নারিকেল প্রতীক) ৩ হাজার ৬৭২ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে নৌকা প্রতীকের জাকির হোসেন পেয়েছেন ২ হাজার ৯৯৫ ভোট।

সোমবার রাতে জেলা নির্বাচন অফিসার ও গোসাইরহাট পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার সোহেল সামাদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হলেও ফলাফল ঘোষণায় দেরি হয়। এতে ক্ষুদ্ধ হন অনেক কর্মী-সমর্থক।
গোসাইরহাট পৌরসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৭৮ জন। এরমধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১৩ হাজার ৪২৯ জন। যা মোট ভোটের ৭১ দশমিক ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৪২ টি ভোট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত— গোসাইরহাট পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে— এবার একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। আর এ কারণে এখানে নৌকার পরাজয় হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিকরা।

গোসাইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান শিকদার বলেছেন, দলের ভেতরে যে কোন্দল ও বিদ্রোহ আছে তা নিরসনের চেষ্টা করেছিলাম। একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আমরা বুঝিয়ে তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কেউ কেউ আমাদের কথা শুনেছেন। যারা শোনেননি তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল না। একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় দলীয় প্রার্থী নানামুখী চাপে ছিলেন।

এদিকে গোসাইরহাট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। এর মধ্যে ৬ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাকি দুজন বিএনপির।
সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘ এক যুগ পর প্রথমবারের মতো গোসাইরহাটে নির্বাচন হয়।

কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন যারা—
পৌরসভাটিতে সাধারণ আসনে ৫২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এরমধ্যে ১ নং ওয়ার্ডের সাধারণ আসনে ৪৩৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন টেবিল ল্যাম্প প্রতীকের হুমায়ুন শিকদার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী উট পাখি প্রতীকের শাহ আলম শেখ পেয়েছেন ৩১৯ ভোট। ২ নং ওয়ার্ডে ৩৯৫ ভোট পেয়ে টেবিল ল্যাম্প প্রতীকের প্রার্থী শেখ মফিজুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ব্রিজ প্রতীকের রাজিব হোসেন পেয়েছেন ৩৫০ ভোট। ৩ নং ওয়ার্ডে ৮৩৬ ভোট পেয়ে উট পাখি প্রতীকের প্রার্থী আলী আকবর সরদার বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী পাঞ্জাবি প্রতীকের মহসীন রেজা পেয়েছেন ৫৩৬ ভোট। ৪ নং ওয়ার্ডে ৩১৭ ভোট পেয়ে ডালিম প্রতীকের প্রার্থী মো. ডালিম সরদার বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী পানির বোতল প্রতীকের আলমগীর হোসেন সরদার পেয়েছেন ২২১ ভোট। ৫ নং ওয়ার্ডে ৬১৯ ভোট পেয়ে উটপাখি প্রতীকের প্রার্থী মো. অহিদুল ইসলাম বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী টেবিল ল্যাম্প প্রতীকের আফজাল হোসেন পেয়েছেন ১৭৫ ভোট। ৬ নং ওয়ার্ডে ৬০৩ ভোট পেয়ে ডালিম প্রতীকের প্রার্থী অনির্বান ঘোষ বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী পাঞ্জাবি প্রতীকের মো. ঈমানুল হক পেয়েছেন ৫৬৯ ভোট। ৭ নং ওয়ার্ডে ৪৩৬ ভোট পেয়ে ব্রিজ প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আমিন বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ডালিম প্রতীকের মো. উজ্জল পেয়েছেন ৪০৪ ভোট। ৮ নং ওয়ার্ডে ৩৮৫ ভোট পেয়ে ব্রিজ প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী পাঞ্জাবি প্রতীকের মোজাম্মেল হক পেয়েছেন ৩৭৩ ভোট। ৯ নং ওয়ার্ডে ৭৩৬ ভোট পেয়ে টেবিল ল্যাম্প প্রতীকের প্রার্থী বিপ্লব বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী উট পাখি প্রতীকের বিল্লাল হোসেন পেয়েছেন ৫৪৫ ভোট।
অপরদিকে সংরক্ষিত আসনে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। সংরক্ষিত আসনের ১ নং ওয়ার্ডে অটোরিক্সা প্রতীকের মোসা. মায়া বেগম ১ হাজার ১২৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী চশমা প্রতীকের জান্নাত পেয়েছেন ৬৯০ ভোট। ২ নং ওয়ার্ডে চশমা প্রতীকের তাহমিনা বেগম ২ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী জবা ফুল প্রতীকের নাদিয়া আফরিন পেয়েছেন ১ হাজার ২৪৬ ভোট। ৩ নং ওয়ার্ডে অটোরিক্সা প্রতীকের মোসা. শেফালী বেগম ১ হাজার ৬৬৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী চশমা প্রতীকের হোসনে আরা পলি পেয়েছেন ১ হাজার ২২৯ ভোট।

এছাড়াও শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দী ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের তিন বারের নির্বাচিত সদস্য আব্দুল খালেক মাদবরের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায় ব্যালেট পেপারের মাধ্যমে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে তার বড় ছেলে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ফারুক মাদবর ৬১৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী মোরগ প্রতীকের প্রার্থী আনছার উদ্দিন মাদবর পেয়েছেন ৫৪০ ভোট। এই নির্বাচনে ২ হাজার ২৯৯ জন ভোটার ও ৫ জন প্রার্থী ছিলেন।

About Post Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *